হাদীসের তাহকীকের নামে নাসিরুদ্দীন আলবানী সাহেব যে প্রতারণা ও বিকৃতির আশ্রয় নিয়েছেন তা মুসলিম উম্মাহের জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায়। একই হাদীসকে এক কিতাবে সহীহ বলেছেন আরেক কিতাবে বলেছেন জয়ীফ। আবার হাদীস বিশারদদের গবেষণা মতে সহীহ হাদীসকে বলেছেন জয়ীফ আবার জয়ীফ হাদীসকে বলেছেন সহীহ। এরূপ বাস্তবতা এক জায়গায় নয়। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কিতাবে। আলবানী সাহেবের সমসাময়িক হাদীস গবেষকগণ আলবানী সাহেরব এরূপ প্রতারণা ও ধোকা চিহ্নিত করেছেন হাজার হাজার স্থানে। আমি এখানে কিছু হাদীস বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করব যাদেরকে হাদীস বিশারদ গণ জয়ীফ বলেছেন কিন্তু আলবানী সাহেব তাদেরকে নির্ভরযোগ্য বলে মত প্রকাশ করে তাদের বর্ণনাকৃত জয়ীফ হাদীসকে সহীহ বানিয়েছেন।
আমাদের দেশে একটা কথা প্রচলিত আছে মধু বিক্রেতা সম্পর্কে। জনৈক মধু বিক্রেতা বলেছিলেন এই মধুগুলো একেবারে খাটি সবই আমার নিজ বানানো। হা হা হা। আলবানী সাহেব বা তথাকথিত আহলে হাদীসদের সহীহ হাদীস মানেও তাই। অর্থাৎ হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ কারণ আমরা নিজে একে সহীর সনদ দিয়েছি। বা একবারে জয়ীফ এখানে কোন ভেজাল নেই আমরা নিজেরাই এগুলো তৈরী করেছি। ইসলামের দ্বিতীয় দলীল হাদীস নিয়ে যদি এরূপ লীলা খেলায় মেতে উঠা হয় তবে বুঝা যায় তারা ইসলামের কিভাবে বারোটা বাজাচ্ছে।
বর্তমান যুগের আহলে হাদীসদের সহীহ হাদীস ও জয়ীফ হাদীসের মাপকাঠি হলো আলবানী। আলবানী সাহেব কোন হাদীসকে সহীহ বলে মত দিয়েছেন তবে আহলে হাদীসরাও বলে থাকেন এটা সহীহ হাদীস। কোন হাদীসকে আলবানী সাহেব জয়ীফ বলেছেন, আহলে হাদীসরাও বলে থাকেন এটি একশ পার্সেন্ট জয়ীফ হাদীস। তাদের সেরূপ খোদাতূল্য গুরু (নাউজু বিল্লাহ) হাদীসের কিবারোটা বাজিয়েছেন দেখেন।
উল্লেখ্য: আমার এই লেখাটা শুধুমাত্র সত্যসন্ধানী, আন্তরিক,ধর্মপ্রাণ, ঈমানদার, মুসলমানদের জন্য। কোন গোড়া, একগেয়ে, বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার এরূপ চিন্তাচেতনার লোকদের জন্য নয়। সেরূপ লোক আমার এই লেখাটা না পড়লেও আমার কোন দু:খ নেই।
সর্বপ্রথম আমাদের বুঝতে হবে সহীহ হাদীস ও জয়ীফ হাদীস কাকে বলে? সহীহ হাদীস মানে এমন নয় যে, একটি হাদীস আছে সেটা আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল সা. এসে সহীহ বলেগেছেন। সেরূপ জয়ীফ হাদীস মানেও এমন নয় এই হাদীসকে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল সা. জয়ীফ বলেছেন। বরং হাদীছ হলো নবী সা. এর কথা কাজ এবং তাঁর স্বীকৃত কথা ও কাজ। নবী সা. যখন কথা কলছিলেন, কাজ করছিলেন বা কেউ করছেন তা নবী সা. স্বীকৃতি দিয়েছেন সবই হয়েছে নবী সা. জীবিত থাকতে সাহাবায়ে কেরামের সামনে। তাহলে নবী সা. এর পর হাদীসের বর্ণনাকারী হলেন সাহাবায়ে কেরাম। এটি হাদীসের সর্ব প্রথমসূত্র। দুনিয়াতে যত হাদীস আছে এবং ছিল সবির প্রথম বর্ণনাকারী সূত্র হলেন সাহাবায়ে কেরাম। এরপর তাবেয়ী এর পর তবে তাবেয়ীগণ। এভাবে মানুষের সূত্র ধরেই আমাদের পর্যন্ত হাদীসগুলো পৌছেছে।
হাদীসের সূত্রদের মধ্যে যখন দেখা গেল সাহাবায়েকেরামের পরবর্তী সূত্র যে সকল মানুষ আছেন তাদের অনেকে মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করছেন, নিজের একটা আরবী কথাকে হাদীস বলে চালিয়ে দিচ্ছেন তখন তৎকালীন এবং তৎপরবর্তী মুহাদ্দিসগণ হাদীসগুলো একত্র করার মনস্ত করলেন। যেহেতু বর্ণনাকারীদের মধ্যে অনেকে মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করছেন সে কারণে এক একজন মুহাদ্দিস এক একটি নিয়ম বাধলেন অন্যজন্ থেকে হাদীস নেওয়ার বেলায়। এই নিয়মের মধ্যে মূল কথা ছিল যে বর্ণনাকারী থেকে আমি হাদীছ নিলাম বা নেব সে বর্ণনাকারী কি আসলে সত্য কথা বলেন? নাকি মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস তার মাঝে আছে, তিনি কি নামায কালাম ঠিক মত করেন, তিনি কি মানুষের আমানত ঠিক মত আদায় করেন? তার কি মুখে দাড়ি আছে? মোটকথা ঐ বর্ণনাকারীর স্বভাব চরিত্র, চালচলন কিরকম। আবার তার মেধা শক্তি কিরকম। তিনি কোন শুনলে কয়দিন মুখস্ত রাখতে পারেন। তার ইলম ও মেধা সম্পর্কে পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে বিরূপ পরিচয় আছে। তিনি কি আত্মশুদ্ধির পথে আছেন না কি খুব দুনিয়া লোভী। তিনি কি অন্যের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সত্যকে মিথ্যা বলেন না কি সব সময় হক কথা বলেন। যে সকল মুহাদ্দিস বর্ণনাকরী সম্পর্কে রিপোর্ট ভাল পেয়েছেন বা রিপোর্ট ভাল প্রসিদ্ধ আছে সেসকল বর্ণনাকারীকে বলা সেকা বা নির্ভরযোগ্য। যে হাদীসের ধারাবাহিকতার প্রত্যেক বর্ণনা কারী মুহাদ্দিসদের উক্ত শর্তমত সেকা বা নির্ভরযোগ্য সেরূপ হাদীসকে সহীহ বলে উক্ত হাদীসের একটা পদবী ঠিক করেছেন মুহাদ্দিসগণ।
এসকল যাচায় শুরু হওয়ার পর এখন হাদীসের বর্ণনাকরীদের সম্পর্কে যাচায় বাছায়ের একটা রীতি আরম্ভ হয়ে যায়। সেকালের মুহাদ্দিসগণ হাদীসের এসকল বর্ণনা কারী সম্পর্কে বিভিন্ন স্থান থেকে তত্ব উপাথ্য যোগাড় করতে আরম্ভ করেন। এমনিভাবে হাজারো বর্ণনা কারীর স্বভাব চরিত্র, মেধা ইত্যাদি সম্পর্কে দস্তবেজ তৈরী হতে থাকে। বর্ননাকারীদের এসব তত্বগুলো একত্র করে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কিতাবাদী লেখেন। এখন সেমতে হাদীসের উপর গবেষণা আরম্ভ হয়। বর্ণকারী সম্পর্কে যে তত্ব উপাথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে সে তত্ব উপাথ্যকে বলা হয় ইলমুর রিজাল। অর্থাৎ যেসকল লোক হাদীস বর্ণনা করেছেন তাদের সম্পর্কে জ্ঞান। সে জ্ঞানের ভিত্তিতে শুরু হয় কোন হাদীসের বর্ণনাকারী কয় জন? সেসকল বর্ণনাকারীদের মধ্যে কয়জন নির্ভরযোগ্য আর কয়জন অনির্ভরযোগ্য। এসব কাজ সবই মুহাদ্দিসদের ইজতিহাদ। মুহাদ্দিসদের মতামত। যে হাদীসের বর্ণনাকারীগণ সকলে যে মুহাদ্দিসের মতানুসারে নির্ভরযোগ্য পেয়েছেন সে হাদীসটি সে মুহাদ্দিসের নিকট সহীহ। আর যে হাদীসটির বর্ণনাকারীদের েএকজন বা একাদিক বর্ণনাকারী যে মুহাদ্দিসের মতে অনির্ভরযোগ্য সে মুহাদ্দিস সে হাদীসকে বলেছেন জয়ীফ। এই হল সহীহ ও জয়ীফ হাদীসের মূল কথা।
এখন দেখুন সাহাবীর পর তাবেয়ী। তাবেয়ীর পর তবে তাবেয়ী। এই তিন স্তরের মধ্যে হাদীস কোনটা সহীহ কোন সহীহ নয় তা জানার জন্য এরূপ বিশাল ইলমুর রিজালের প্রয়োজন ছিলনা। কারণ এদের মধ্যে তো রিজাল হাতে গোনা। এক হাদীসের সূত্র মাত্র 2-3জন। সে কারণে সে যুগে হাদীস নিয়ে এত বিতর্কও ছিল না। আবার তাদের মেধা শক্তি এত প্রখর ছিল যে, তাদের একেক জন হাজার হাজার হাদীস মুখস্ত রাখতে পারতেন। ইমাম আবু হানীফা রহ. হলেন সে যুগের মানুষ। এদরে কাছে হাদীস হাদীস এক সূত্র বা সূত্রে পৌছে গেছে। বলা যায় হাদীসের মূল খারকানার কাছেই অবস্থান ছিল ইমাম আবু হানীফা রহ. এর। এ কারণে সহীহ হাদীস ও জয়ীফ হাদীস বলে অন্তত ইমাম আবুহানীফার রহ. এর ব্যাপারে একথা বলার যোগ্যতার কারো নেই যে, তার এ মাসআলাটির কোন দলীল নেই। বা তার দলীল জয়ীফ।
সহীহ ও জয়ীফ হাদীসের কথাই আসছে অনেক পরে। যখন হাদীসের সূত্র 10/12 বা 15/16 হতে চলেছে তখন হাদীসের মধ্যে মিথ্যার ছড়াছড়ি আরম্ভ হয়ে যায়। তখন উল্লেখিত ইলমুর রিজাল দিয়ে হাদীস সহীহ কি না তা যাচাই করার আবশ্যিকতা দেখা দেয়। তখনই কিতাব আকারে হাদীসের সংকলন হতে থাকে। সুতরাং হাদীস সহীহ নাকি জয়ীফ এগুলো আম্ভই হয়েছে ইমাম আবু হানীফার জামানার আরো অনেক পরে। তারতম্য এটুকু। ইমাম আবু হানীফা রহ. রাসূল সা. ও তাঁর মাঝে শুধু একজন মাধ্যম বা বর্ণনাকারীর মাধ্যমে হাদীস পেয়েছেন বা দুজন। আর হাদীসের কিতাবাদী যেগুলোতে সহীহ বা জয়ীফ হাদীস লেখা হয়েছে তাদের আর নবী করীম সা. এর মধ্যে হাদীস বর্ণনা কারী মাধ্যম প্রায় 14,15,16জন। একারণে তাদেরকে ইলমুর রিজালের উপর নির্ভর করে হাদীস সহীহ না কি জয়ীফ এটি নির্ণয় করতে হয়েছে। এই হিসাবে বর্তমান যে, আহলে হাদীসরা শুধু দলীল খোঁজে তা নিজেদের মতামত জানার জন্য প্রয়োজন ইমাম আবুহানীফা কর্তৃক বর্ণিত মাসআলার জন্য এসকল পরের দলীল গুলো কোনই প্রয়োজন নেই। কিন্তু তার পরেও হানফী মাযহাবের গবেষক গণ ইমাম আবু হানীফার প্রত্যেক মাসআলা নির্ভরযোগ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত করেছেন। এটা হলো তাদের বেশি পাওয়না বা বোনাস।
কিন্তু নববী যুগের প্রায় 15শত বছর পরে এসে আলবানী সাহেবগং কি প্রতারণ করেছন তা সামান্য খতিয়ে দেখার বিষয়। নিজেদের উদ্দেশ্য প্রণোদিত বিষয়াদী সঠিক সাবেত করার জন্য রিজাল শাস্ত্রে হাদীস বর্ণনাকারীদের মধ্যে যারা একে বারে জয়ীফ বা অনির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হিসেবে স্বীকৃত সেরূপ অনেক বর্ণনাকারীকে আলবানী সাহেব প্রথমে নির্ভরযোগ্য স্বীকৃতি দিয়ে তাদের হাদীসগুলোকে সহীহ বলে প্রমাণ করেছেন।
আমি এখানে সেরূপ কয়েকজন বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করছি যাদেরকে পূর্বের মুহাদ্দিসগণ অনির্ভরযোগ্য বলেছেন কিন্তু আলবানী সাহেব সেসবকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
১। আহমদ ইবনে ফরজ আবু উতবা হামসীকে আলবানী সাহেব সেকা বা নির্ভরযোগ্য রূপে রূপান্তরিত করে তার বর্ণনাকৃত হাদীসকে সহীহ বলেছেন। আলবানীর কিতাব সিলসিলায়ে আহাদীসে সহীহা খন্ড ২, পৃষ্ঠা ২৩৬।
২। ইসমাঈল ইবনে মুসলিম মক্কী। (প্রগুক্ত ১/৬১৩, ৬/৫০৫)
৩। বকর ইবনে খুনাইস। (প্রাগুক্ত ২/৬০৯)
৪। হাকাম ইবনে সেনান। (প্রগুক্ত ৪৭)
৫। হানযালা ইবনে আব্দুল্লাহ সুদুসী (প্রাগুক্ত ১/২৪৯)
৬। সালেহ ইবনে বশীর। (প্রগুক্ত ২/২৩৯)
৭। মুসলিম ইবনে ওয়ারদান। (প্রাগুক্ত ২/৫০৩)
৮। আব্দুল্লাহ ইবনে কায়সান মরূযী (প্রাগুক্ত ১/১৩)
৯। আব্দুল মুনঈম ইবনে বশীর। (প্রগুক্ত ১/৫৮২)
১০। ইয়াহয়া ইবনে কাছীর আবু নছর। (প্রাগুক্ত ১/২৬৪)
১১। আলফজল ইবনে মুখতার। (প্রাগুক্ত ২/৫৮২)
১২। খালেদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ কমরী দামেশকী। (প্রাগুক্ত ১/১১৩)
এরা হলেন ঐসকল রাবী যাদেরকেও আলবানী সাহেব নির্ভরযোগ্য রাবী বলে হাদীসকে সহীহ বলেছেন। অথচ এসকল বর্ণনাকারী মুহাদ্দিসদের মতে এত জয়ীফ যে হাদীসে এরা থাকবে সে হাদীস জয়ীফ বলে বিবেচিত হবে।
এখন দেখা যাবে আলবানী সাহেবের এসকল নির্ভর যোগ্য সহীহ হাদীসের রাবীগণ অন্যান্য মুহাদিসের মতামতে কোন পর্যায়ের রাবী বা বর্ণনাকারী। এদের হাদীস জয়ীফ না কি সহীহ।
১। আহমদ ইবনে ফরজ আবু উতবা হিমস।
আবু মুহাম্মদ হাকেম বলেন, আবু উতবা যখন ইরাক পৌছে তখন ইরাকীগণ তার কাছ থেকে হাদীস নিয়েছেন এবং এর সম্পর্কে ভাল মত দিতেন। কিন্তু মুহাম্মদ ইবনে আউফ তার ব্যাপারে সমালোচনা করতেন। এবং আমি ইবনে হাওসাকে এই রাবী সম্পর্কে অনির্ভরযোগ্য বলতে শুনেছি। মুহাম্মদ ইবনে আউফতো তাকে কাযযাব বা মিথ্যাবাদী এবং খারাপ চরিত্রের বলে দাবী করেন। আবু হাশেম আব্দুল গাফফার ইবনে সালাম বলেন, আমি আমার বন্ধুদেরকে তার ব্যাপারে মিথ্যাবাদী হিসেবে মন্তব্য করতে দেখার পর আমি তার কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করিনি। (তাহযীবুততাহযীব ১/৬৮)
খতীবে বোগদাদী তো বলেন আবু উতবা সম্পর্কে মদ পানকারী মদ্যপ ছিল। (তারিখে বোগদাদী ৪/৩৪১)
পর্যালোচনা: যে বর্ণনাকারীকে মিথ্যাবাদী, খারাপ চরিত্র, মিথ্যুক, মদ্যপ বলে মুহাদ্দিসগণ তার কাছ তেকে হাদীস গ্রহণ করেননি। তাযে একেবারী জয়ীফ রাবী তাতে কোন সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। কিন্তু এরূপ বর্ণনাকারী থেকে হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করা, সেরূপ হাদীসকে সহীহ হাদীস বলে কিতাবে উল্লেখ করা এবং নিজের মতকে সেহাহ সিত্তা থেকেও উর্দ্ধে মনে করা তা কোন ধরনের প্রতারণা তা পাঠক মাত্রই বুঝবেন।
২। ইসলামাঈল ইবনে মুসলিম মক্কী
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্ব (রহ.) তাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন, ইমাম আলী ইবনে মাদানী বলেছেন তিনি সবসময় ভুল করে থাকে, তিনি আরো বলেন উক্ত ব্যক্তি আমার কাছ থেকে একটি তিন প্রকারে বর্ণনা করেছেন।আরো বলেছেন তার কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করা যাবে না। তিনি عن حسن، عن سمرہ বলে মুনকার হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন বলেছেন তিনি কোন বস্তুই না। জাওযজানী বলেছেন ইসমাঈল ইবনে মুসলিম কল্পনা প্রসূত হাদীস বলে, ইমাম নাসায়ী বলেছেন তিনি অস্বীকৃত, ইয়াহইয়া ইবনে মাহদী এবং ইবনে মোবারক একে ছেড়ে দিয়েছেন। (তাহযীবুল কামাল ৩/১০২)
পর্যালোচনা:
যে বর্ণনাকারীকে মুনকারুল হাদীস, ওয়াহীউল হাদীস, ভুল বর্ণনা কারী, একই বর্ণনাকে তিন বার উল্টাপাল্টা করে বলেছেন, হাদীসের ইমাম গণ যাকে পরিত্যাগ করেছেন, যার বর্ণনা লেখতে পছন্দ করতেন না এরূপ একজন বর্ণনাকারীর বর্ণনা গ্রহণ করা, তাথেকে মাসআলা ইসতিম্বাত করা এটি কোন ধরনের বড় গবেষকের কাজ হতে পারে। যে কোন চিন্তাশীল ব্যক্তি তা বিচার করবেন।
৩। বকর ইবনে খুনাইস
ইবনে সালেহ মিশরী, ইবনে খেরাশ এবং দারে কুতনী (রহ.) এই বর্ণনাকারী সম্পর্কে বলেছেন তিনি মতরূক তথা পরিত্যায্য, উমর ইবনে আলী, ইয়াকুব ইবনে শায়বা নাসায়ী উকাইলী (রহ.) বলেছেন এই বর্ণনাকারী জয়ীফ বা দূর্বল। নসায়ী বলেছেন দূর্বল। ইবনে হাতেম নিজ পিতা থেকে এই বর্ণনাকারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন তিনি কি পরিত্যায্য। উত্তরে তিনি বললেন সে পর্যন্ত পৌছে গেছে। ইমাম আবু দাউদ বলেছেন তিনি কোন বস্তুই না। ইয়াকুবে এই বর্ণনাকারীদেরকে ওই সূচীর অন্তর্ভুক্ত করেছেন যাদের কাছ থেকে হাদীস ও বর্ণনা গ্রহণ করা হতো না। জাওযানী বলেছেন তিনি অগ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণনা করেন। ইবনে আদী বলেছেন ভাল লোকদের কাছে তার বর্ণনা ন্দেহযুক্ত। অনেক সময় তিনি অনুমান ভিত্তিক হাদীস বলে থাকেন। তাঁর হাদীস সমূহ জয়ীফ হাদীসের অন্তর্ভুক্ত। তিনি ওই লোকদের মধ্যে নন যাদের হাদীস দলীল হিসেবে বর্ণনা করা যায়।
ইবনে মদীনী বলেছেন আমি আমার পিতার কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি উক্ত রাবী সম্পর্কে বলেন তিনি জয়ীফ। বাযযার বলেছেন তিনি দূর্বল। ইবনে হিব্বান বলেন তিনি বহু মওযু বা বানানো হাদীস বর্ণনা করেছেন।
এই রূপ বর্ণনাকারীর হাদীস আলবানী সাহেব তাঁর সহীহ হাদীস সমূহে বর্ণনা করেছেন।
৪। হাকাম ইবনে সেনান
ইবনে মুঈন ও নাসায়ী বলেছেন তিনি জয়ীফ। ইমাম বুখারী বলেছেন তার কাছে অনুমান প্রসূত হাদীস বহু আছে এবং তিনি কাছীরুল ইসনাদ নন। ইবনে সাআদ বলেন হাদীসে তিনি জয়ীফ। ইমাম আবু দাউদ বলেছেন তিনি জয়ীফ। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, তাঁর হাদীস লেখার যোগ্য নয়। সাজী বলেছেন তাকে মিথ্যুক মনে করি।
সুতরাং এরূপ হাদীসের বর্ণনাকারীর হাদীসকি সহীহ হাদীসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। অথচ আলবানী সাহেব তার সহীহ হাদীস সমূহে এরূপ লোকের হাদীসও বর্ণনা করেছেন।
৫। হানযালা ইবনে আব্দুল্লাহ সুদুসী
ইবনে মদীনী বলেন ইয়াহয়া ইবনে সাঈদ বলেছেন আমি এই বর্ণনাকারীকে দেখেছি। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে ত্যাগ করেছি। মায়মুন বলেন ইমাম আহমদ (রহ.) তাকে জয়ীফ বলেছেন। আছরাম বলেছেন ইমাম আহমদ (রহ.) তাকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন। অভাবিত ও আশ্চর্য জনক হাদীস বর্ণনা করেন। সালেহ ইবনে আহমদ বালেছেন আমার পিতা বলেছেন তিনি জয়ীফ। ইবনে মুঈন ও নাসায়ীও তাকে জয়ীফ বলেছেন। আবু হাতেম বলেছেন লাইসা বিক্ববিয়্যিন। ইবনে হিব্বান বলেছেন হানযালা ইবনে আব্দুল্লাহ তার কুনিয়ত ছিল আবু আব্দুর রহমান। শেষ বয়সে তার গড়বড় হয়েগেছে। এমনকি জানতেন না যে রেওয়ায়াত তিনি করতেন সেখানে পুরাতন কথাগুলো গড়বড় করে একের সাথে আরেকটি মিলিয়ে বলে দিতেন। ইয়াহইয়া ইবনে কাত্তান তাকে পরিত্যাগ করেছেন। (আত্তারীফ বি আওহামী ৬/৩৪)
পর্যালোচনা : তিনি পরিত্যাক্ত এবং জয়ীফ। নিজেই জানতেননা তিনি কি বর্ণনা করছেন। প্রথমে তিনি তা কিরূপে বর্ণনা করেছিলেন। এরূফ জয়ীফ রাবীর হাদীছও আলবানী সাহেব তার সহীহ হাদীছে বর্ণনা করেছেন।
৬। সালেহ ইবনে বশীর
মুফাজ্জল গালাবী প্রমূখ বলেন ইবনে মুঈন তাকে জয়ীফ বলেছেন। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক সাফফানী প্রমূখ বলেছেন ইবনে মুঈন বলেছেন তিনি কিছুই না। জা’ফর তায়ালাসী বলেছেন ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন বলেছেন তিনি কিসসা কাহীনী বলতেন এবং তাঁর সকল বর্ণনা যেগুলো সাবেত থেকে বর্ণনা করেছেন সবই বাতিল। (তাহযীব ৪/৩৮৩)
হাসান ইবনে আলী আফফনকে বলেন হাম্মাদ ইবনে আন সালেহ থেকে কিছু হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন তা মিথ্যা। (তারীখে বাগদাদ ৯/৩০৮)
আব্দুল্লাহ ইবনে আলী মদীনী বলেন আমার পিতা তাকে বড় জয়ীফ বলেছেন। মুহাম্মদ ইবনে উসমান ইবনে আবী শায়বা বলেন আলী বলেছেন তিনি কিছুই না। জয়ীফ। উমর ইবনে আলী বলেন তিনি জয়ীফুল হাদীস। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেছেন তিনি মুনকারুল হাদীস। আজেরী বলেন আমি ইমাম আবু দাউদ থেকে জিজ্ঞেস করলাম তার হাদীস লেখা যাবে কি না? তিনি বলেন না।নাসায়ী বলেন তিনি জয়ীফ। তার হাদীস পরিত্যায্য। (তাহযীবুত্তহাযীব ৪/৩৮৩)
এরূপ জয়ীফ রাবীর বর্ণনাও আলবানী সাহেব সহীহ হাদীসের মধ্যে গণ্য করেছেন।
No comments:
Post a Comment